অজুহাত, জেলা প্রশাসনের আমন্ত্রণপত্র মানেই 'স্পষ্ট চাঁদার ফরমান'
গাজীপুরের একটি পাদুকা কারখানার মালিক শফিক আহমেদ (ছদ্মনাম)। বিশেষ দিবস ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের আমন্ত্রণপত্র পেলেই আঁতকে ওঠেন তিনি। তার কাছে এই দাওয়াত মানেই ‘চাঁদার ফরমান’। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আমন্ত্রণে তাকে গুনতে হয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
এরমধ্যে ৫০ হাজার জেলা প্রশাসকের ফান্ডে আর ২০ হাজার দিতে হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) অফিসে। একইভাবে ২১ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানেও চাঁদা দিয়েছেন ৭০ হাজার। ৪ দিন আগে তার টেবিলে পৌঁছে গেছে মহান স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্র। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলামের পাঠানো এই আমন্ত্রণ রক্ষায় ইচ্ছার বাইরেও তাকে গুনতে হবে আরও ৫০ হাজার টাকা। ইউএনওকেও না বলার সুযোগ নেই।
গাজীপুরে তার মতো বড় ও মাঝারি অন্তত ৫০০ শিল্প-কারখানার মালিক আছেন যারা প্রতিটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) ‘আমন্ত্রণ’ রক্ষায় ২০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দেন।
শিল্প-কারখানা ছাড়াও অন্যান্য খাতের বড় ব্যবসায়ীরাও এই চাঁদাবাজির হাত থেকে রেহাই পান না। শুধু গাজীপুর নয়, বিশেষ দিবস ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বেপরোয়া এই চাঁদাবাজি অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। চাপা ক্ষোভ থাকলেও বিপদের আশঙ্কায় এ নিয়ে অভিযোগ দূরের কথা, প্রকাশ্যে মুখ খুলতেও নারাজ ভুক্তভোগীরা। তবে তাদের সঙ্গে গোপন আলাপে পাওয়া তথ্যের সূত্র ধরে বেশ কয়েকটি জেলায় যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেপরোয়া চাঁদাবাজির প্রমাণ মিলেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চাঁদাবাজির বিপুল এই টাকা এলআর ফান্ডের (লোকাল রিলেশন্স) নামে ‘হালাল’ করা হয়। স্থানীয় পর্যায়ে বেসরকারি চাঁদা বা অনুদানের অর্থে এলআর ফান্ড গঠিত। জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অধীনে এই তহবিল পরিচালিত হয়। জাতীয় সংসদের উপনেতা ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এই তহবিলকে চাঁদাবাজি বলে মন্তব্য করেছিলেন।
২০১৬ সালের অক্টোবরে জাতীয় সংসদে একটি বিল পাশের সময় দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘এলআর ফান্ড কোথা থেকে আসে? এগুলো লোকালি রেইজড। জনগণের পকেট থেকে আসে। ব্যবসায়ীদের ডাকা হয়। তারা কাঁপতে কাঁপতে ডিসির কাছে চলে আসেন। দিস ইজ এক্সটরসন (এটা চাঁদাবাজি)। এই তহবিলের ভিত্তি ও স্বচ্ছতা নিয়ে বেশ আগেই প্রশ্ন তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
অভিযোগ আছে, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আপ্যায়নে এই তহবিল থেকে যতটা ব্যয় হয়, তার অনেকগুণ বেশি কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত কাজে খরচ দেখিয়ে লোপাট করেন। জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য আমার সময় সরকার দিত ১০ হাজার টাকার মতো। এখন হয়তো এই অঙ্ক ২০-২৫ হাজার টাকা হতে পারে।
আমার সময় ৫০ হাজার টাকা খরচ হলে এখন হয়তো তিন লাখ টাকা খরচ হয়। চাঁদা তুলেই এই খরচ করা হয়। এলআর ফান্ড তোলার জন্য সরকারি অনুমোদন আছে। প্রয়োজন মতো এই ফান্ডে টাকা তোলা হবে, হিসাব রাখা হবে, খরচ করা হবে। প্রতিবছর এটা অডিট করা হবে। এখন এটাকে পুঁজি করে কেউ যদি অপব্যবহার করে তাহলে ঊর্ধ্বতনদের তদারকিতে আসা উচিত এবং এর প্রতিকার করা উচিত। যাতে কেউ এটা না করতে পারে।’
জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে এলআর ফান্ড গঠনের উদ্দেশ্য মহৎ ছিল। বর্তমান সময়ে এই তহবিল ঘিরে চাঁদাবাজির অভিযোগ উদ্বেগজনক। এটা প্রশাসনের জন্য আত্মঘাতীমূলক। যে পরিপ্রেক্ষিতে এই তহবিল গঠন করা হয়েছিল সেটার আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। ফলে আদৌ এর প্রয়োজন আছে কিনা-তা বিবেচনায় নিয়ে এই তহবিল আইন করে বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কারণ কিছু সংখ্যক কর্মকর্তার অপকর্মের দায় পুরো প্রশাসনের ওপর চাপছে। ফলে প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর মানুষের আস্থার সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের চাঁদাবাজি গ্রহণযোগ্য নয়।’
গাজীপুর থেকে চাঁদাবাজির প্রথম অভিযোগ আসে যুগান্তরের কাছে। এরপর গত ৫ দিন ধরে ঢাকা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, সিলেট ও নরসিংদী জেলাকে মডেল হিসাবে নিয়ে অনুসন্ধান চালায় এ প্রতিবেদক। অনুসন্ধানকালে অনেক ব্যবসায়ী ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ হয়। সবাই এক বাক্যে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ঘিরে চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করলেও কেউ নাম প্রকাশ করে তথ্য দিতে রাজি হননি। কেউ কেউ বলেছেন, প্রশাসনকে এই চাঁদা বা ‘অনুদান’ না দিলে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালানো কঠিন।
গাজীপুরের নামকরা শতভাগ রপ্তানিমুখী একটি বস্ত্র কারখানার মালিক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘বছরে কমপক্ষে তিনবার ডাক পড়ে। একেক সময় একেক রকম চাঁদার হার। এসি ল্যান্ড থেকে ডিসি পর্যন্ত সবাইকে চাঁদা পাঠাতে হয়। যেসব কারখানা মালিকদের জমিজমা ও অন্যান্য ডিসপুট আছে তাদের চাঁদার হারও বেশি।
ছোট-বড় কোনো কারখানা মালিকই চাঁদাবাজির হাত থেকে রেহাই পান না। ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। আমি ২০-৩০ হাজার টাকার বেশি দিতে পারি না। ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ। তবে কিছু কিছু বড় কারখানা মালিক আছেন যারা ৫-১০ লাখ টাকাও দেন। তারা জেলা প্রশাসন থেকে বাড়তি সুযোগ-সুবিধাও পান। অন্তত ৫০০ গার্মেন্ট কারখানা থেকে গড়ে ২০ হাজার টাকা করে চাঁদা তুললেও কোটি টাকা উঠে। অন্যান্য খাতের কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ হিসাবের বাইরে। সব মিলিয়ে গাজীপুরে অন্তত ২ হাজার প্রতিষ্ঠান থেকে গড়ে ১০ হাজার টাকা করে আদায় করা হলেও ২ কোটি টাকা চাঁদা উঠে। এভাবে বছরে অন্তত তিনটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ঘিরে কম করে হলেও ৫-৬ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়।’
রপ্তানিমুখী আরেকটি বস্ত্র কারখানার মালিক আলাপকালে বলেন, ‘অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আমার অফিসে বছরে ২-৩ বার ডিসি ও টিএনও অফিস থেকে চিঠি আসে। তবে আমাকে কখনো চাঁদা নির্ধারণ করে দেয়নি। কখনো ১০ হাজার, কখনো ২০ হাজার টাকা পৌঁছে দেই।’ জানা গেছে, এবার গাজীপুর ডিসি অফিসের একজন নারী কর্মকর্তা তালিকা ধরে মোবাইলে কল করে রীতিমতো চাঁদা পাঠানোর জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। ভয়ে ওই কর্মকর্তার নাম মুখে আনেননি কেউ।
তবে যুগান্তরের অনুসন্ধানে প্রযুক্তির সাহায্যে জানা গেছে, ওই নারী কর্মকর্তার নাম সিরাজুম মুনিরা। তিনি সহকারী কমিশনার পদে কর্মরত। প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণে দেখা গেছে, ১৪ মার্চ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত তিনি ৩২৫ জনের মোবাইলে কল করেন। যাদের সঙ্গে কথা বলেন তাদের বেশিরভাগই কোনো না কোনো শিল্পকারখানার প্রতিনিধি। তাদের চাঁদা পাঠিয়ে দিতে বলেন। ১৮ মার্চ ৩৩ ও ১৯ মার্চ ৩৮ জনের মোবাইল ফোনে কল করে চাঁদার তাগাদা দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। ডিসি অফিসের স্টাফ পরিচয়ে আলাপকালে এ প্রতিবেদকের কাছে চাঁদা দাবির বিষয়টি স্বীকার করেন জয়দেবপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক।
তিনি বলেন, ‘গাজীপুরে প্রায় ৪০০ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক আছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ৪-৫ জন সাড়া দিয়েছেন। আমাকে ৩-৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও দিতে পারব। সবাই তো তা পারবে না। আপনাদের (এ প্রতিবেদককে ডিসি অফিসের কর্মকর্তা ভেবে) উচিত সংগঠনের নামে চিঠি না দিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নামে চিঠি দেওয়া। তাহলে সবাই টাকা দিতে বাধ্য হবে। তাছাড়া বর্তমান ডিসির সঙ্গে আমাদের দূরত্বের কারণেও অনেকেই সাড়া দেন না। তারপরও আপাকে বলবেন, যতটুকু তুলতে পারব খলিল (ডিসি অফিসের স্টাফ) সাহেবের কাছে পৌঁছে দেব।’
একইভাবে গাজীপুরের একটি নিটিং কারখানার হিসাব বিভাগের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘আপা আমাকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু আমাদের অবস্থা এখন খুবই খারাপ। একটি কারখানা বন্ধ আছে। আরেকটি বন্ধের পথে। শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছি না। আপনারা প্রশাসনে আছেন সব খবরই জানেন। আমরা সব সময়ই ২৫ হাজার টাকা করে দিয়ে আসছি। ১৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আপাকে অনুরোধ করেছিলাম একটু কম দেওয়ার জন্য। পরে ২৫ হাজার টাকাই দিয়েছি। এবার দিতে পারব না। প্লিজ একটু মেহেরবানি করেন।’
অন্য একটি শিল্প গ্রুপের এক কর্মকর্তাও চাঁদা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। বেপরোয়া চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার অফিস থেকে ফোন করে কারও কাছে টাকা দাবি করা হচ্ছে না।’
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনে সরকারি বাজেট কত-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা বাজেটের বিষয় নয়। প্রতিবারই যখন এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন হয়, তখন আমরা অনুদান গ্রহণ করি। এটার জন্য আমরা কার্ড পাঠিয়ে আমন্ত্রণ করি। অনুদান আমাদের অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং সেটা সংরক্ষণ করি।’ এ ধরনের অনুষ্ঠানে কেমন অনুদান আসে-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই। কারণ প্রথম আমি অনুষ্ঠানটা করছি।’
চাঁদার তাগাদা দেওয়া প্রসঙ্গে মোবাইলে কল করে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার সিরাজুম মুনিরা কোনো জবাব না দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তার আগে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিবার যেভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় এবারও সেভাবেই করা হচ্ছে।’
ঢাকা জেলার জিরাবো এলাকার বড় একটি গার্মেন্ট কারখানার মালিক বলেন, ‘এটা দিতেই হয়। আমাকে কেউ জোর করে না। অঙ্কও নির্ধারণ করে দেয় না। অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে চিঠি পাঠালে কিছু টাকা পাঠিয়ে দেই।’
মানিকগঞ্জের ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কাছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দাওয়াতপত্র পাঠানো হয়। দাওয়াত পাওয়ার পর ব্যবসায়ীরা নিজেরাই বসে চাঁদার অঙ্ক ঠিক করেন। তারা জনপ্রতি ৫-১০ হাজার টাকার বেশি দেন না। সবার কাছ থেকে টাকা তুলে ইউএনও অফিসে পৌঁছে দেওয়া হয়।
সিলেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে চাঁদাবাজির কৌশল কিছুটা ভিন্ন। যে কোনো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের আগে ডিসি অফিস থেকে ব্যবসায়ী নেতাদের ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে চা-নাস্তা খাইয়ে তাদের অনুষ্ঠানে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়। এরপর ব্যবসায়ী নেতারা তাদের সদস্যদের কাছ থেকে টাকা তুলে ডিসি অফিসের ফান্ডে জমা করে দেন। আবার কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে সরাসরি চাঁদার টাকা দিয়ে আসেন।
অনুসন্ধানে, নরসিংদী জেলায় পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য। সেখানে চাঁদাবাজির কৌশল কিছুটা আলাদা। আমন্ত্রণপত্রের খামের পেছনে পেন্সিল দিয়ে সাংকেতিক অক্ষরে চাঁদার অঙ্ক লিখে দেওয়া হয়। ৪০ হাজার টাকা লিখে পাঠানো একটি আমন্ত্রণপত্র এ প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান সামনে রেখে রাস্তার পাশের বড় বড় রেস্টুরেন্ট, পেট্রোল পাম্পসহ বিভিন্ন খাতের নামকরা ব্যবসায়ীদের কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে।
আলাপকালে একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘একটি জেলায় যখন কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধানের জনসভা আহ্বান করা হয় তখন ওই দলের জেলা নেতাদের যেমন ঈদ শুরু হয়, তেমনি বিশেষ দিবস ও রাষ্ট্রিয় অনুষ্ঠান ঘিরে জেলা প্রশাসনের কর্তারা ঈদের আবহে থাকেন। এসব দিবসে যারা চাঁদা না দেন তাদের হয়রারির শিকার হতে হয়। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই বেড়ে যায় মোবাইল কোর্টের তৎপরতা।
বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট মালিক, পেট্রাল পাম্প, মজুতদার ও সরকার বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের ব্যবসায়ীরা বেশি টার্গেটে থাকেন। এ জেলায় একুশে ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের মতো অনুষ্ঠান আয়োজনে কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়। জেলা প্রশাসনের এই চাঁদাবাজির তথ্য সরকার ও প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের সবাই জানেন। তারপরও এটা বন্ধে কেউ উদ্যোগ নেয় না।
জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে টাকা তুলতে পারে। তবে অঙ্ক নির্ধারণ করে চাঁদা আদায় করার তথ্য আমার জানা নেই। এটা করা হলে অবশ্যই আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। তবে খোঁজখবর নেওয়া ছাড়া এ ব্যাপারে মন্তব্য করা যাবে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনে সরকারি বরাদ্দ কত আছে সেটাও দেখা ছাড়া বলা যাবে না।’