সুস্থ থাকতে প্রতিদিন কতবার আলিঙ্গন করবেন, জানালেন গবেষকরা
খুব খুশিতে থাকলে অথবা দুঃখে থাকলে আমরা আমাদের প্রিয় ব্যক্তিদের আলিঙ্গন করতে পছন্দ করি। সেই প্রিয় মানুষটি যে কেউ হতে পারে। হতে পারে মা বা বাবা। হতে পারে ভাই বা প্রেমিক। বলা হয় আলিঙ্গন মনের কষ্ট কমায় এবং অনেক স্বস্তি দেয়। প্রিয় মানুষটির সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা হতেই জড়িয়ে ধরলে অদ্ভুত শান্তি পাওয়া যায়। যেন দূর হয়ে যায় যাবতীয় খারাপ লাগা। গবেষণা এই জড়িয়ে ধরার বেশ কিছু উপকারিতা খুঁজে পেয়েছে। আলিঙ্গন শুধুমাত্র অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম নয়। নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলে মস্তিষ্ক থেকে এক প্রকার হরমোন নিঃসৃত হয়, যা শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নানাভাবে সাহায্য করে।
একটি গবেষণা অনুসারে, আলিঙ্গন শুধুমাত্র একাকীত্বের অনুভূতি দূর করতে পারে না, তবে মানসিক চাপের কারণে শরীরের ওপর ক্ষতিকর প্রভাবও কমাতে পারে। কাউকে আলিঙ্গন করলে মানুষ আনন্দ অনুভব করে, যা সুস্থ থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 'আলিঙ্গন' করলে শরীর ও মন বিশ্রাম পায়। অনুভূতি-গুড হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, আলিঙ্গন যে কারো মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সক্ষম। আলিঙ্গন অবস্থায় অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যার ফলে মস্তিষ্ক শান্ত থাকে। ১০ সেকেন্ড বা তার বেশি সময় ধরে আলিঙ্গন করলে মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে খুব কাছের কোনো বন্ধু বা প্রিয়জন কেউ জড়িয়ে ধরলে মানসিক প্রশান্তি আসে।
জেনে নিন আলিঙ্গন করলে কী ধরনের উপকার পাওয়া যায়-
১. আলিঙ্গন নিরাপত্তা এবং বিশ্বাসের অনুভূতি তৈরি করে। 'আলিঙ্গন' করলে অক্সিটোসিনের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
২. একাকীত্ব, বিচ্ছিন্নতা এবং রাগের অনুভূতি হ্রাস পায়।
৩. আলিঙ্গন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শক্তিশালী করে। এটি শরীরে শ্বেত রক্ত কণিকার উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ব্যক্তি সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকে।
৪. আলিঙ্গনের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পায়। শরীরের উত্তেজনা চলে যায় এবং পেশী শিথিল হয়।
৫. আলিঙ্গন নরম টিস্যুতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ব্যথা উপশম করে।
৬. 'আলিঙ্গন' করলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও দূর হয়। কাউকে জড়িয়ে ধরলে শরীর থেকে অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় 'কাডল হরমোন'। আলিঙ্গন হরমোন উদ্বেগ ও উত্তেজনা দূর করতে এবং স্বস্তি দিতে কাজ করে।
৭. আলিঙ্গন হার্টের স্বাস্থ্য বাড়াতেও সাহায্য করে। ব্যক্তি সুখী এবং নিরাপদ বোধ করেন।
৮. আলিঙ্গন একটি ধ্যানের মত, যা আপনার মনে শান্তি এবং শিথিলতা দেয়।
দিনে কতবার আলিঙ্গন করবেন: প্রতিদিন আলিঙ্গন দরকার আমাদের জীবনে। বেঁচে থাকার জন্য দরকার, ব্যবস্থাপনার জন্য দরকার, দরকার উন্নতি করার জন্য। প্রশ্ন হলো, দিনে কতবার আলিঙ্গন করতে হবে? এর একটি উত্তর দিয়েছেন ফ্যামিলি থেরাপি নিয়ে কাজ করার জন্য বিখ্যাত মার্কিন ফ্যামিলি থেরাপিস্ট ভার্জিনিয়া স্যাটিয়ার। তাকে ‘মাদার অব ফ্যামিলি থেরাপি’ও বলা হয়।
তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রতিদিন অন্তত চারবার আলিঙ্গন করা দরকার। মেইটেন্যান্স থেরাপির জন্য দিনে আলিঙ্গন দরকার আটবার। আর উন্নতির জন্য প্রতিদিন দরকার ১২ বার।’