'ভোটের ফলাফল যে আগে থেকেই নির্ধারিত সেটা তো ইসি সচিব জাহাঙ্গীর ফাঁস করে দিয়েছেন'
৭ জানুয়ারির নির্বাচন দেশকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, এই ‘একরতফা’, ‘ডামি’ ও ‘প্রহসনমূলক’ নির্বাচনকে জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। শেখ হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) এই প্রহসনমূলক নির্বাচন দেশকে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা ব্রিটিশ পর্যবেক্ষক জেজ কৌলসন বলেছেন- বাংলাদেশে উত্তর কোরিয়া স্টাইলের একদলীয় নির্বাচন হয়েছে।’
মঙ্গলবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের ফলাফল যে পূর্বনির্ধারিত তা প্রকাশ্যে নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম রোববার রাতে ফলাফল ঘোষণার সময় ফাঁস করে দিয়েছেন। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীরের সঙ্গে আলাপের সময় ইসি সচিবকে বলতে শোনা যায়- ‘যেয়ে ঘুমাইয়া যামুগা। এখানে বসে থেকে লাভ আছে? সবাই রেজাল্ট জানে। ৬৪ ডিসিদের মেসেজ আছে। ৬৪টা জেলার রেজাল্ট কী হবে সবাই জানে।’
তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি জনগণ আওয়ামী লীগকে লাল কার্ড দেখিয়েছে। চরম কলঙ্কিত অপদস্তমূলক লজ্জার পরাজয় ঘটেছে গণবিচ্ছিন্ন বেপরোয়া একনায়ক মাফিয়া গংদের। বাংলাদেশের ইতিহাসে জনগণের অভাবনীয়-অভূতপূর্ব নীরব প্রতিবাদে একটি উদ্ভট, গণবর্জিত প্রহসনের ভোট ডাকাতির মঞ্চায়ন দেখল গোটা বিশ্বের মানুষ। শত ভয়-ভীতি, জেল-জুলুম নির্যাতন-প্রলোভন ও সরকারের সাঁড়াশি চাপ উপেক্ষা করে ভোট প্রদান না করার মাধ্যমে জনগণ এই নির্বাচনকে (দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন) ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
রিজভী বলেন, ৭ জানুয়ারি গভীর রাত থেকে চুরি-ডাকাতি, জালভোট, শিশু-কিশোর ভোট, একই ব্যক্তির ৫০ ভোট, মিনিটে ৫০ ভোট দিয়ে ও বিকাল তিনটা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোটের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পরে গণভবনের চাপে আবার এক ঘণ্টা পরই ৪০ শতাংশ এবং সোমবার দুপুরে তা আরেক দফা বাড়িয়ে ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ ভোটের গোজামিলের ভৌতিক হিসাব করেছে কমিশন। এসব ভুয়া হাস্যকর নির্বাচনের ইতিহাসে কলঙ্ক তিলক উৎকীর্ণ করল ডামি সরকার। জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই অংশগ্রহণহীন ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি প্রদান করেছে। বিশ্বের সমস্ত মিডিয়া এবং পর্যবেক্ষকরা এ নির্বাচনকে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনগণ ও ভোটার সম্পর্কহীন পুরোপুরি ‘ওয়ান উয়োম্যান শো’-এর ঘোষিত জয়-পরাজয়ের ভোট বলে আখ্যায়িত করেছে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার দেশকে বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেছে। কারা হেফাজতে প্রতিদিন বিএনপির নেতাকর্মীদের মৃত্যুর সংবাদ আসছে। নতুন নতুন কালাকানুন করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও সাধারণ জনগণকে শৃঙ্খলিত করেছে। আচার-বিচার-আইন আদালত, পুলিশ, সিভিল প্রশাসন সবকিছু দলীয়করণ করে প্রতিষ্ঠা করে সমস্ত মৌলিক অধিকার কবর দিয়ে ভয়ের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। লুটপাট করে দেশকে দেউলিয়া বানিয়েছে। সিন্ডিকেট করে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বি করে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে। দেশের জনগণকে ভোটারহীন করে রিফিউজিতে পরিণত করেছে।
রিজভী আরও বলেন, দুর্নীতিবাজ ‘ডামি সরকার’ দিয়ে দেশ চলতে পারে না। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং বারো কোটি মানুষের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী জানান, সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে ১০৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময়ে ৪টি মামলায় ৩৮৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।