৩৫ এর পর স্কিনকেয়ার। ৩৫ বছর বয়সেও কীভাবে ধরে রাখবেন ত্বকের তারুণ্য
বয়স যখন ত্রিশের মাঝামাঝি চলে এসেছে, তখন হঠাৎ আয়নায় চোখ পড়লে ত্বকের পরিবর্তনগুলো বেশ ভালোই নজরে আসে। এই ক’দিন আগেও তো চোখের নিচে এতটা রিংকেলস ছিলো না। স্কিনের উজ্জ্বলতাও আগের মতো নেই, কেমন যেন নিষ্প্রাণ লাগছে! এমনটা মনে হলে বুঝে নিন, এবার ত্বক জানান দিচ্ছে তার চাহিদার কথা। বলা হয়ে থাকে, বয়স ২২-২৫ হলেই অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার স্টার্ট করতে হয়। কিন্তু যারা এতদিন প্রোপারলি ত্বকের যত্ন নেননি, তারা নিশ্চয়ই ফিল করছেন যে এবার একটু কেয়ার করা দরকার! ৩৫ এর পর স্কিনকেয়ার রুটিন কেমন হওয়া উচিত, সেটাই আজ জানাবো।
খেয়াল করে দেখুন, ৩৫ এর পর আমাদের জীবনে বেশ চেঞ্জ আসে, সময়ের সাথে সাথে দায়িত্ব বাড়ে। স্ট্রেসও বাড়তে থাকে। এসময় শরীরে হরমোন লেভেল পরিবর্তিত হতে শুরু করে। সেই সাথে বাড়তে থাকে ফাইন লাইনস, রিংকেলস, ডার্ক সার্কেল, ড্রাইনেস এর মতো সমস্যা। কীভাবে ধরে রাখবেন ত্বকের তারুণ্য, সেটাই জেনে নিন আজ।
৩৫ এর পর স্কিনকেয়ার
অনেকেই আসলে একটু কনফিউজড থাকেন, এই বয়সে এসে স্কিনকেয়ার কীভাবে স্টার্ট করবো, কীভাবে সেই আগের গ্লোয়ি স্কিন ফিরে পাবো। জানিয়ে রাখি, রাতারাতি কোনো প্রোডাক্টই আপনাকে স্মুথ, ফ্ললেস স্কিন দিতে পারবে না। হেলদি স্কিন পেতে বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন রেগুলার মেনটেইন করতে হবে। দিনের আর রাতের স্কিনকেয়ার রুটিন হবে আলাদা।
মর্নিং স্কিনকেয়ার রুটিন
দিনের শুরুতে প্রস্তুতি নিতে হবে এমনভাবে যেন সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে স্কিনকে প্রোটেকটেড রাখা যায়। মর্নিং স্কিনকেয়ারের ফার্স্ট স্টেপ হচ্ছে ক্লেনজিং। মাইল্ড ক্লেনজার দিয়ে ফেইস ক্লিন করে নিন। এরপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী টোনার অ্যাপ্লাই করুন। টোনার ভালোভাবে অ্যাবজর্ব হয়ে গেলে পছন্দের ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন। তারপর মোস্ট ইম্পরট্যান্ট স্টেপ, সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করা। সানস্ক্রিন অবশ্যই ফেইসের পাশাপাশি নেইক এরিয়া, হাতেও অ্যাপ্লাই করতে হবে।
সানস্ক্রিন রিঅ্যাপ্লাই কীভাবে করবেন?
সানস্ক্রিন অবশ্যই দুই থেকে তিন ঘন্টা পরপর রিঅ্যাপ্লাই করতে হবে। বাইরে গেলে সানস্ক্রিনের উপরে এসপিএফ আছে এমন কমপ্যাক্ট পাউডার ইউজ করতে পারেন। মনে রাখবেন, সানস্ক্রিনের কোনো বিকল্প নেই।
রাতের স্কিনকেয়ার রুটিন
এইতো গেলো মর্নিং স্কিনকেয়ার রুটিন, এখন রাতের বেলার রুটিন জেনে নেই। দিনের বেলায় আমরা স্কিনকে রোদ আর পল্যুশন থেকে প্রোটেক্টেড রাখার ট্রাই করেছি। এখন রাতের বেলায় মেইন পারপাস হচ্ছে স্কিনের ড্যামেজ রিপেয়ার করা, নারিশমেন্ট প্রোভাইড করা।
ডাবল ক্লেনজিং কিন্তু মাস্ট
রাতের স্কিনকেয়ার শুরু করুন ডাবল ক্লেনজিং দিয়ে। অনেকেই এই ডাবল ক্লেনজিংয়ে মেকআপ ওয়াইপস ব্যবহার করে থাকেন। মেকআপ ওয়াইপস কুইক ফিক্সড সল্যুশন হিসেবে আপনি ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু প্রোপারলি এটি স্কিনকে ক্লিন করতে পারে না। অর্থাৎ ডিপ ক্লিন করে না। ডাবল ক্লেনজিংয়ে প্রথম ধাপে আপনার প্রয়োজন হবে অয়েল বেইজড ক্লেনজার বা মাইসেলার ওয়াটার। নেক্সট স্টেপে যেকোনো ফোম ক্লেনজার বা জেল বেইজড ক্লেনজার দিয়ে ফেইস ক্লিন করে নিন। এরপর হাইড্রেটিং টোনার অ্যাপ্লাই করে নিন।
অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিনে রাখুন রেটিনল
রেটিনল ত্বকে কোলাজেন ও ইলাস্টিন প্রোডাকশন বৃদ্ধি করে স্কিন টেক্সচারকে ইম্প্রুভ করে। তাই ৩৫ এর পর স্কিনকেয়ার রুটিনে এই অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টটি ইনক্লুড করতে পারেন। ২২/২৫ বছর থেকেই রেটিনল ব্যবহার করা যায়। স্কিনকেয়ারের ক্ষেত্রে রেটিনলের ম্যাক্সিমাম পার্সেন্টেজ হলো ১%। এজিং সাইনস প্রিভেন্টে শুরুতে যদি আপনি ০.০১% পার্সেন্টেজ দিয়ে রেটিনল ব্যবহার শুরু করতে পারেন, তাহলে সেটি একদম সেইফ। ০.০১ থেকে ০.০৩% কে বলা হয় রেটিনলের লোয়ার স্ট্রেন্থ। এরপর আপনি ধীরে ধীরে একটু হাই কনসেন্ট্রেশনে যেতে পারেন। অ্যাডভান্স লেভেলে ০.৩ থেকে ১% ব্যবহার করা যায়।
খুব অল্প পরিমাণে রেটিনল ইউজ করুন। উইকলি ১/২ দিন ব্যবহার করা যায়। রেটিনল ইউজের ক্ষেত্রে আমরা স্যান্ডউইচ মেথড ফলো করতে পারি। ময়েশ্চারাইজার> রেটিনল> ময়েশ্চারাইজার, এই প্রসেসে অ্যাপ্লাই করলে স্কিন ইরিটেশন হওয়ার চান্স কমে যায়। রেটিনল অন্যান্য এক্সফোলিয়েটিং এজেন্ট যেমন AHA, BHA এর সাথে মিক্স করা থেকে বিরত থাকুন।
নাইট ক্রিম বা স্লিপিং মাস্ক
নাইট ক্রিম ময়েশ্চারাইজেশনের সাথে সাথে স্কিন সেলস রিনিউ করে, রিংকেলস কমাতে হেল্প করে। এক্সট্রা কেয়ারের জন্য সপ্তাহে ২/৩ দিন স্লিপিং মাস্কও ব্যবহার করতে পারেন। নাইট ক্রিম জেন্টল ফর্মুলার যা রেগুলার ইউজ করা যায় এবং এতে অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টের কনসেনট্রেশন তুলনামূলক কম থাকে। অন্যদিকে স্লিপিং মাস্ক পাওয়ারফুল উইকলি ট্রিটমেন্ট হিসেবে কাজ করে, কারণ এতে হাই কনসেনট্রেশনের অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহৃত হয়। স্লিপিং মাস্ক অ্যান্টি এজিংয়ের কাজ করে, স্পটস ফেইড করে, ড্যামেজড স্কিন ব্যারিয়ার রিপেয়ার করে।
আইক্রিম
এবারে আসা যাক চোখের যত্নে। এই বয়সে চোখের চারপাশে বয়সের ছাপ একটু বেশিই ভিজিবল হয়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আইক্রিম দিয়ে আই এরিয়া জেন্টলি ম্যাসাজ করে নিন।
সেই সাথে মেনটেইন করুন হেলদি লাইফস্টাইল
ডিটক্স ড্রিংকস
ত্বকের পরিচর্যার সাথে সাথে হেলদি লাইফস্টাইল ফলো করা কিন্তু মাস্ট! অতিরিক্ত সুগার, কার্ব ইনটেক কমিয়ে আনুন। ফ্রেশ সালাদ, ফ্রুট, টকদই, বাদাম এগুলো ডায়েট চার্টে রাখুন। ডিটক্স ড্রিংকসও ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত রাখতে বেশ ইফেক্টিভ। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ ও ইয়োগা করতে পারেন।
বয়স ৩৫ মানেই অনেক দেরি হয়ে গেছে ভেবে বসে থাকবেন না, শুরু করুন আর ফলাফল দেখুন। ৩৫ এর পর স্কিনকেয়ার রুটিন কেমন হবে, সেটার বেসিক ধারণা দেওয়ার ট্রাই করেছি। ত্বকের প্রয়োজন ও সমস্যা অনুযায়ী আপনি নিজেই স্কিনকেয়ার রুটিন সেট করতে পারেন। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।