যে কারণে শাহজাহান ওমরকে জামিন দেওয়া হয়েছে জানালেন কৃষিমন্ত্রী
নাশকতার মামলা থেকে জামিন পেয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর শান্তির পক্ষে থাকায় জামিন পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ক্ষমতাসীনরা যখন বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন, তখন বিএনপির অন্য নেতারা কারাগারে। আবার শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তাহলে বিচার বিভাগ স্বাধীন হয় কীভাবে?
এ প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রাজ্জাক বলেন,
যারা সহিংসতায় জড়িত, তারা গ্রেফতার হয়েছেন। সহিংসতা তো একজন কর্মী করেন আর সেজন্য নির্দেশ দিতে হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তো আর বিচারপতির বাসায় হামলা করেননি, তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। যিনি নির্দেশ দিয়েছেন, তাকে কারাগারে থাকতে হবে। এটা না করলে দেশে আরও বেশি সন্ত্রাস হতো।
কাজেই সন্ত্রাস ও সহিংসতার হুকুমদাতাদের গ্রেফতার না করলে এগুলো কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো। এ প্রশ্ন রেখে সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, শাহজাহান ওমর শান্তির পক্ষে, সহযোগিতা করছেন। কাজেই তিনি জামিন পেয়েছেন।
তিনি নির্বাচনে আসবেন, ঠিক আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করবেন কেন? জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের দরজা তো বন্ধ না। ১৯৭০ সালেও আমরা মুসলিম লীগের অনেক লোককে দলে নিয়েছি। মানুষ তার মতাদর্শ পরিবর্তন করেন, এটা সারা পৃথিবীতেই হয়। যুক্তরাজ্যে চার্চিলের মতো নেতাও দল পরিবর্তন করেছেন।
আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে শাহজাহান ওমরের সাবেক দল বিএনপি। গত ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন বিকালে তাকে ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। পরে তিনি নিজেই সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মানুষের সেবা করার জন্য নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমর। ছবি সময় সংবাদ
আওয়ামী লীগ কী ৩০০ আসনে একাই লাড়বে-নাকি জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নেবে।
এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন,
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন। কাজেই এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি, সংসদে একটি বিশ্বাসযোগ্য বিরোধী দল থাকবে। যে কারণে আমরা কিছুটা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমাদের অনেক সম্ভাবনাময়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। তাদের মধ্যে যারা পাস করে আসবেন, তারাও সংসদে ভূমিকা রাখবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সবার অংশগ্রহণে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
নিজেরা নিজেরা কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা চাই যোগ্য, নিবেদিত, অঙ্গীকারাবদ্ধ কাউকে যেন জনগণ ভোট দেন। আমরা নৌকার প্রার্থী দিয়েছি, ভোট দিল না, এটা তো ভোটারদের পছন্দ। তারাই ঠিক করে দেবে।
বিএনপি যেখানে নির্বাচনে আসছে না, সেখানে আপনারা কী ভোটাদের অংশগ্রহণ পাবেন- প্রশ্নে তিনি বলেন, কেন পাব না? দুইজন যদি প্রার্থী হয়? আমাদের কাছে তথ্য আছে, আমাদের অনেক স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিযোগিতায় আছেন। তারা অনেক সম্ভাবনাময়ী। কাজেই আমাদের নৌকার প্রার্থীরাও নিজেদের প্রমাণ করে সংসদে আসুক। যে তারা মানুষের জন্য ভালো কাজ করেছেন, নিবেদিত ছিলেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ কী- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন,
আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো, বেশিরভাগ মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন করা। এটি অস্বীকার করলে চলবে না যে, বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল, তারা এলে নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু তারা না এলে আমরা কী করবো, আমরা তো চেষ্টা করেছি, তাদের আনার জন্য। জাপানে ছোট্ট বিরোধী দল আছে, কিন্তু বিরোধীদল তো আছে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে আমাদের তো কিছু করার নেই। তাদের তো জোর করে নির্বাচনে আনতে পারি না।
এখন যারা প্রার্থী হচ্ছেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রতীক নেয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্য-এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, ১৭ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর এ ব্যাপারে আমরা মন্তব্য করবো।
হরতাল-অবরোধের পরেও কীভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে সহিংসতার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরাও চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা অনেক বেশি, তারা অনেক বেশি সৃশৃঙ্খল ও বড়। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যে সহিংসতা হয়েছে, তার তুলনায় এখন অনেক কম। আমরা বিশ্বাস করি, আরও কয়েকদিন পর এটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
আগে হরতালের একটি রিকশাও চলত না, এখন বিদেশিরাও চলাচল করতে সাহস পাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, হরতালের কোনো বাস্তবায়ন নেই। কারণ বিএনপির সঙ্গে জনগণ নেই, তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা জানে, তাদের নেতা দেশের বাইরে। অপরাধ করার জন্য দলটির শীর্ষ নেতা সাজাপ্রাপ্ত। কাজেই তারা নির্বাচনে আসতে চান না।
আগে বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
বিএনপির নেতা শাহজাহান ওমরকে ৪ নভেম্বর রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন তাকে ঢাকার নিউমার্কেট থানার বাসে আগুন দেয়ার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ। ওই মামলায় তাকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। এরপর ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান শাহজাহান ওমর। সন্ধ্যার পরই কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। এর পর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ঝালকাঠি-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।