ট্রেনে আসার টিকিট থাকলেই হোটেলে ৭০ শতাংশ ছাড়
বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে পর্যটকদের নিয়ে প্রথমবারের মতো পর্যটন শহরে এলো ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’। শুক্রবার রাতে ১০২০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে যাত্রা করে ট্রেনটি শনিবার সকাল ৮টায় কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে পৌঁছায় বলে জানান কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার আতিকুর রহমান। কক্সবাজার-ঢাকা-কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচলের মধ্য দিয়ে শত বছরের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা দরিয়ানগরের মানুষের।
এদিকে রেলে কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছেন অধিকাংশ হোটেল কর্তৃপক্ষ। রেলের টিকিট দেখালেই ৬০-৭০ শতাংশ ডিসকাউন্ট মিলছে আবাসনে। তারকা হোটেলগুলোতেও ৫০ শতাংশ এবং ক্ষেত্রবিশেষে ৬০ শতাংশ ডিসকাউন্ট মিলছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় জনশূন্য কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম বাড়াতে এ উদ্যোগ বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ছাড়ের এই সুযোগ এক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে বলেও জানান তারা।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, শুক্রবার দুপুরে ১০২০ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার ছেড়ে যায় কক্সবাজার এক্সপ্রেস। ফিরতি ট্রেনটি সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে সকাল ৮টায় কক্সবাজার স্টেশনে এসে পৌঁছায়। ট্রেনে সিংহভাগই পর্যটক। হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ শুক্রবার এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়। হোটেলে এসে রেলে ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করলেই এ সেবা পাবেন পর্যটকরা। শনিবার সকালে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে সমিতিভুক্ত হোটেলের পক্ষ থেকে পর্যটকদের মাঝে প্রচারপত্র বিলি করা হয়। একই সঙ্গে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয় পর্যটকদের। এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরাও সহযোগিতা করেন।
হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ বলেন, ট্রেন চালু হওয়ায় শুধু কক্সবাজারের মানুষ নয়, পুরো দেশের মানুষ আনন্দিত। দেশের যে কোনো প্রান্তের মানুষ সহজেই কক্সবাজার আসতে পারবে। এ খুশিতে আমরা বিশেষ এ ছাড় দিচ্ছি। ট্রেনের টিকিট দেখালেই আগামী সাতদিন এ সুবিধা পাবেন পর্যটকরা।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোয়াইট অর্কিড হোটেলের মহাব্যবস্থাপক রিয়াদ ইফতেখার বলেন, বছরের এ সময় পর্যটকে ভরপুর থাকে কক্সবাজার। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় এবার ভরা মৌসুমেও পর্যটকশূন্য। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ধরনের ব্যবসায়ীদের। অনেক হোটেল কর্তৃপক্ষ অনিচ্ছা সত্ত্বেও শ্রমিক বিদায় করছেন। প্রায় ৫০ ভাগ রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় ট্রেনে পর্যটক আগমন অব্যাহত থাকলে সব হোটেল যদি কমবেশি পর্যটক পায় তবে ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারবে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে পুলিশের একাধিক টিম। পর্যটকদের সুবিধার্থে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, জরুরি সেবা ও হটলাইন।
সহকারী স্টেশন মাস্টার আতিক জানান, ঢাকাগামী যাত্রীদের যেভাবে ফুল দিয়ে অভিবাদন জানানো হয়েছিল ঠিক সেভাবে রেলে প্রথম পর্যটক হয়ে আসা যাত্রীরা নামার সঙ্গে সঙ্গে ফুল ও লিফলেট দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ হতে তাদের অভিবাদন জানিয়ে ঝামেলামুক্তভাবে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তায় ১০ জন রেল পুলিশ নিয়োজিত থাকছে। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ার ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিট ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ভাড়া ২ হাজার ৩৮০ টাকা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৩৮৬ টাকা, এসি সিট ৪৬৬ এবং এসি বার্থ ৬৯৬ টাকা।
গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে রেল নেটওয়ার্কে ৪৮তম জেলা হিসাবে যুক্ত হয় কক্সবাজার। পর্যটন শহরের সঙ্গে শুধু ঢাকা নয়, পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গেও এ রেলপথ যুক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবির।
কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন প্রকল্পের প্রকৌশলী এনামুল হক সরকার জানান, ছয়তলার এই স্টেশনে রয়েছে চলন্ত সিঁড়ি, মালামাল রাখার লকার, হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমলসহ আধুনিক সব সুবিধা। ৪৬ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতা সংবলিত স্টেশনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এতে আছে কনভেনশন হল, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ, এটিএম বুথ এবং প্রার্থনার স্থান।